সপ্তাহান্তে ৩ দিনের ছুটিতে রাঁচি ভ্রমনঃ ( ৩য় পর্ব )

আজ ১০ই মার্চ, রোববারঃ  ভোর ৫.০০ টা। ঘড়ির অ্যালার্মে ঘুম ভাঙল।  সূর্যোদয় ভোর ৬.০০ টায়। ব্রাশ করে ফ্রেশ হয়ে ৫.৪৫ এ বেরবার জন্য তৈরি। গাড়ীর চালক বলেছিল তৈরি হয়ে থাকবেন আমি চলে আসব। কথামত এসেও গেল।  ৫ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম সান রাইজ পয়েন্টে।

 জায়গাটা খুবই ছোটো , তাই ভিড় বেশী। পারলে আপনারা ৫.৩০ র মধ্যে পৌঁছে যাবেন। এটি ঝারখণ্ড টুরিজিম এর নিজস্য হোটেল ‘প্রভাত বিহার’।

আমরা  এই হোটেলটির বুকিং পাইনি। আপনারা পারলে এই হোটেলটিতে ঘর বুকিং করবেন। ঘরগুলি বেশ ভালই এবং সূর্যোদয় এই হোটেলটির ছাদ থেকেই দেখতে পাবেন। এসে বুকিং না পাওয়ার সম্ভবনাই বেশী , তাই অনলাইনে বুকিং করাই ভালো।

৫.৫৯ সূর্য আস্তে আস্তে তার আলোরেখা  ছড়াতে  শুরু করেছে । গোলাপী থেকে লাল। সে এক অনাবিল দৃশ্য। সবাই হাতে মোবাইল অথবা ক্যামেরা নিয়ে প্রস্তুত। সেই সন্ধিক্ষণের ছবি তুলতে। আস্তে আস্তে সূর্য বিকশিত হচ্ছে। সময়  ৬.০৫ সম্পূর্ণরুপে বিকশিত। বিস্ময়কর অনাবিল সাৌন্দর্য। সূর্যের এমন রূপ কি ভোলা যায়।

এখান থেকে বেরিয়ে সামনেই একটি ছোটো বাজার, কয়েকটি দোকান খোলা , চা তৈরি হচ্ছে। লোভ সামলাতে পারলাম না । বিস্কিট সহযোগে চা খেয়ে ফিরে গেলাম হোটেলে ( গ্রিন প্যেলেস)। গিজার তো চলছিলই একটু বসেই স্নান সেরে নিলাম।  সকাল ৯.০০ টার মধ্যে ব্রেকফাস্ট সেরে বেরিয়ে পরতে হবে । আজকের গন্তব্য স্থল গুলি এরকম, নেতারহাট সাইট সিন করার পর ‘দশম জলপ্রপাত’ দেখে  ফিরবো রাচিঁ , কারন আজ বাড়ি ফেরাও আছে।

ব্রেকফাস্ট সেরে বেরতে আমাদের ৯.৩০ বেজে গেল। হোটেল চেক আউট সেরে রওনা দিলাম নেতারহাট সাইট সিন করতে। প্রথমে গেলাম  ‘নিম্ন ঘাঘরি জলপ্রপাত’ দেখতে। এখানে আপনাকে কোন সিঁড়ি ভাঙতে হবে না , পাইন গাছের ছাওয়ায় ঢাকা সমভুমি। এন্ট্রি ফি জন প্রতি ১০টাকা । দেখে বেরিয়ে এসে এবার যাব কোয়েল ভিউ পয়েন্ট । খুব বেশী সময় লাগলো না। দীর্ঘ পাইন গাছের সারি। আর কিছুই নেই। কোয়েল দুরঅস্ত। বেশী সময় না কাটিয়ে আমরা আবার রওনা হলাম নেতারহাট  ‘চালেট হাউস’। এটি একটি  হেরিটেজ বিল্ডিং । সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি। কিছু কিছু জায়গায়  সংস্কার করা হয়েছে। তবে পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন।  সামনের ঘাসের বাগানটি ভালই রক্ষনা বেক্ষণ হয়। ওখানেই অনেকটা সময় কাটালাম।

আশ করছি আপনাদের ভাল লাগবে।  এবার নেতারহাটকে পেছনে রেখে এগতে হবে ‘দশম জলপ্রপাত’ এর দিকে। নেতারহাট থেকে দশম জলপ্রপাত এর দূরত্ব ১৯০ কিমিঃ, সময় লাগবে ৪.৩০ ঘণ্টা ( দুপুরের খাবার সময় ধরে)। আমরা যাত্রা শুরু করে ছিলাম ঠিক দুপুর  ১১.৩০ টায় । পৌঁছলাম ঠিক বিকেল ৫ টায়। মাঝে একটি হোটেলে দুপুরের খাবার সেরে নিয়ে ছিলাম।

দশম জলপ্রপাত দেখতে আপনাকে কোন এন্ট্রি ফি দিতে হবে না কিন্তু গাড়ীর পার্কিং ফি লাগবে ৫০ টাকা। দশমে সিঁড়ি বেশী নেই ওঠা নামা নিয়ে ২০০ র কাছাকাছি। ওপর থেকেও আপনি দেখতে পাবেন। তবে নিচে জলপ্রপাতের কাছে গেলে ভালো লাগবে। সন্ধ্যে ৬.০০ টায় বন্ধ হয়ে যায়।

অন্ধকার হয়ে এসেছে , সামনেই চায়ের দোকান , আপনি চা ছাড়া বিস্কিট , ক্যাডবেরি ও ম্যাগি পাবেন। ঘড়িতে ৬ টা বেজে ১৫ মিনিট । এবার আমাদের রাঁচি ফেরার পালা। সময় লাগবে প্রায় ২ ঘনণ্টা। সেখানেই আমরা হোটেলে রাতের খাবার সেরে নিয়ে ট্রেনে উঠবো বাড়ীর উদ্দেশ্যে। রাঁচি স্টেশন এর কাছেই একটি হোটেলে রাতের খাবার খেয়ে নিলাম। সুন্দর খাবার। পরিষ্কার রেস্তরাঁ ।  খাওয়া সেরে এবার রাঁচি স্টেশন। হোটেল টি থেকে  স্টেশন ১ কিমিঃ পথ। স্টেশনের কাছেও বেশ কিছু রেস্তরাঁ আছে সেখানেও রাতের খাবার সারতে পারেন।

  ১০ মিনিটেই পৌঁছে গেলাম রাঁচি স্টেশন। এবার গাড়ী ছেড়ে ট্রেনে ওঠার পালা। তবে হ্যাঁ গাড়ীর চালকের ব্যবহার মনে থাকবে। খুবই ভদ্র ও বন্ধুত্ব পরায়ন। রাত ১০.০৫ রাঁচি – হাওড়া “ক্রিয়া যোগা এক্সপ্রেস’ স্টেশনে এসে গেল ও ১০.১৫ মিনিটে ছেড়েও দিল।

    নৈসর্গিক প্রকৃতি কে ছেড়ে  ফিরতে সবারই মন খারাপ। সবাই আবার নিজেদের দৈনন্দিন জীবনে ফিরে যাব। কিন্তু প্রকৃতি তার অনাবিল সাৌন্দর্য নিয়ে একই জায়গায়  বিরাজমান। সবাই ভাল থাকবেন ও  সুস্থ থাকবেন। যদি এই প্রতিবেদনটি আপনাদের সামান্য ভালো লেগে থাকে বা আনন্দ দিয়ে থাকে সেটাই আমার সবথেকে বড় পাওনা। আবার ফিরে আসব কোন এক নতুন ভ্রমণ কাহিনি নিয়ে। ততক্ষণ বিদায়। শুভরাত্রি।

Click to view image gallery

Click to view Day 1

Click to view Day 2

Comments (0)

Leave a comment

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *