সপ্তাহান্তে ৩ দিনের ছুটিতে রাঁচি ভ্রমনঃ ( প্রথম পর্ব )
রাঁচি পূর্ব ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের রাজধানী। কোলকাতা থেকে এর দূরত্ব সড়ক পথে কম বেশী ৪০২ কিলোমিটার এবং সময় লাগবে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা। ( অবশ্যই নির্ভর করবে আপনার গাড়ীর গতি ও রাস্তায় ট্রাফিক ও রাস্তায় যানজট কতটা)। আমাদের সদস্য সংখ্যা ৫ জন। ছুটির তারিখ স্থির না হওয়াতে আমরা ঠিক করে ছিলাম সড়ক পথেই যাব।
হাতে সময় কম থাকার জন্য ঠিক করেছিলাম একটুও সময় নষ্ট করবো না। ৩ দিনের ছুটি। ৮ই,৯ই, ও ১০ই মার্চ। তাই ৭ই মার্চেই বেরোবার ঠিক করলাম। ভাগ্য ভাল বা ভগবান সহায় যাই বলুন আমরা ৭ তারিখের রাতের ট্রেন ‘ক্রিয়া যোগা এক্সপ্রেস’ এ (KRIYA YOGA EXPRESS) টিকিট পেয়ে গেলাম। অন্যান্য ট্রেনগুলি সবই সকালে অথবা দুপুরে।
সেইরূপ আমাদের যাত্রও শুরু হল। হাওড়ায় ট্রেন সময় মতো ছেড়েও দিলো । পরের দিন (৮ই, মার্চ) সকাল ৫.৪৫এ পৌঁছে গেলাম রাঁচি। হোটেল আগেই বুক করা ছিল। স্টেশনের কাছাকাছি অনেক গুলি হোটেল আছে। আপনারা পছন্দ মতো তারিফ সহ অনলাইন এ বুক করতে পারেন অথবা রাঁচি পৌঁছেও সরাসরি বুক করতে পারেন। আমরা হোটেল আমন প্যেলেস এ উঠে ছিলাম আরও একটি কারন ২৪ ঘণ্টা চেক ইন এর সুবিধা । ডিলাক্স রুম গুলি বেশ ভালই।
যাইহোক ,আমরা খুব তারাতাড়ি ব্রাশ, স্নান সেরে এবং চা ও বিসকিট খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম আমাদের প্রথম দিনের গন্তব্য সিতা ফলস্, জনা ফলস্ ও হুদ্রু ফলস্। আমাদের গাড়ীর ( JH 01 0140, New EARTIGA, Owner Mr. Krishna Khalkho, ৯১২২৪৬৮২১৬ ) অগ্রিম বুকিং করা ছিল। চাইলে আপনারাও ফোনে যোগাযোগ করে এই গাড়ি অথবা পছন্দ মতো বুকিং করে নিতে পারেন। গাড়ীর মালিকের ব্যাবহার খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ। নিজেই গাড়ীটি চালান। তাঁর ব্রেকফাস্ট ও লাঞ্চের দায়িত্ব টুরিস্টের।
রাঁচির এই সময় আবহাওয়া মনরম, মার্চের সকালেও ভাল ঠাণ্ডা এবং সোয়েটার নিয়ে যেতে ভুলবেন না। গন্তব্যে যাবার আগে রাস্তায় ( পুরুলিয়া রোড) একটি ধাবায় ( হোটেল ঝাড়খণ্ড) সেরে নিলাম ব্রেকফাস্ট । খুব সুন্দর খাবার । আপনার মন ভরে যাবে। এখানে আপনি আপনার পছন্দমতো আমিষ ও নিরামিষ উভয়ই পাবেন। আমরা অর্ডার করেছিলাম আলুর পরটা, মিক্সড ভেজ সবজি , ডিমের অমলেট ও চা। অসাধারন খাবার। আশাকরছি ব্যাবহার ও খাবার আপনাদের ভাল লাগবে। যা পরিমান খাবার দিয়েছিল আমাদের আর লাঞ্চ করার প্রয়জন হইনি।
রাঁচি থেকে সিতা ফলস্ প্রায় ৪৪ কিলোমিটার , সময় লাগবে প্রায় দেড় ঘণ্টা । সিতা ফলস্ দেখতে প্রথমেই এন্ট্রি ফি লাগবে ১০ টাকা জন প্রতি। নামতে ও উঠতে হবে সব মিলিয়ে ৫০০ সিঁড়ি। সামান্য বিশ্রাম নিয়ে উঠা নামা করলে কষ্ট কম হবে। তারপর জনা ফলস্ । এটি একই রাস্তায় পড়বে। এটাতেও নামতে উঠতে হবে সব মিলিয়ে ৬৫০ সিঁড়ি। এখানেই আপনাকে দুপুরের খাবার সেরে নিতে হবে। এর পরের গন্তব্য হুদ্রু ফলস্। এখানেও এন্ট্রি ফি লাগবে ১০ টাকা জন প্রতি। ও পার্কিং ফি আলাদা। এটাতেও নামতে উঠতে হবে সব মিলিয়ে ১২০০ সিঁড়ি। প্রায় ৩০০ ফুট ওপর থেকে পড়ছে । এই জলপ্রপাতটি সুবর্ণরেখা নদীর গতিপথে তৈরি হয়েছে। এটি রাজ্যের সর্বোচ্চ জলপ্রপাতগুলির মধ্যে একটি। এত উঁচু থেকে পড়া জলপ্রপাতের দৃশ্যটি দেখার মতো । এখন ঘড়িতে বাজে বিকেল ৪.৩০ । আজ পরের ও শেষ গন্তব্য চানদিল বাঁধ ও জলাধার । গাাড়ীতে উঠে পড়লাম, লাগলো প্রায় ৩০ মিনিট। সুন্দর রাস্তা ও মনোরম সৌন্দর্য এখানে আপনাকে কিছুটা সময় কাটাতে উদ্ভুধ্য করবেই । অনেকটাই সময় কাটিয়ে ঘড়িতে সন্ধ্যে ৬.১৫ । প্রকৃতিকে টাটা করে প্রথম দিনের ভ্রমণ শেষ করে আমরা রওনা দিলাম আবার রাঁচির উদ্দেশ্যে ।
Comments (0)